0





মশাবাহিত রোগের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিশ্বের অন্য দেশের রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। যা সরকার কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে পেরেছে। তবে ঢাকায় সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া চিকুনগুনিয়া রোগ মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো পদক্ষেপ নেই। এমনকি পরিকল্পিত উদ্যোগও নেই ঢাকা সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। কেবল প্রচার-প্রচারণায়ই সীমাবদ্ধ চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ কার্যক্রম।
রাজধানী ঢাকায় প্রতি ১১ জন জ্বরের রোগীর মধ্যে ১ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী এমন তথ্য জানিয়েছেন রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের পরিচালক (আইইডিসিআর) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের দেওয়া তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত ৩১’শ ৬১ জন ব্যক্তি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত  সঠিক কোনো তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। অধিদপ্তরের নিজস্ব উদ্যোগে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি কতো রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত?
চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি না থাকলেও কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় বলে বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার গণমাধ্যমে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা চিকুনগুনিয়াকে মহামারী বলা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সরকারের কোন সংস্থার পক্ষ থেকে মহামারি হিসেবে উল্লেখ করেনি।
যদিও চিকুনগুনিয়া মহামারি নয় সরকারি সংস্থার মতে। তবুও সরকারি একাধিক সংস্থা এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে ও এর বিস্তার টেনে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু মহামারি আকার ধারণ করে নাই যে রোগ তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের তরফ থেকে প্রাথমিক যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা দৃশ্যমান। এর আগে গুটি বসন্ত, পোলিওসহ নানা রোগের বিস্তারকে সরকারের পক্ষ থেকে লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। এবার চিকুনগুনিয়া রোগের বিষয়ে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না প্রশ্ন ভুক্তভোগী জনসাধারণের?
চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় পরিকল্পিত পরিকল্পনা করা হয়েছি কিনা? আগামী বছরে এই রোগের পাদুর্ভাব আবার দেখা না দেয় তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা? চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে কি না, যেমনটা নেওয়া হয়েছিলো গুটি বসন্ত মোকাবেলায়? এসব বিষয় জানতে পরিবর্তন ডটকমের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, গুটি বসন্ত কিংবা পোলিও’র জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কর্মসূচি নেওয়া হয়। চিকুনগুনিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক কর্মসূচি নেই এবং চিকুনগুনিয়া নির্মূল করা সহজ কাজ নয়।
তিনি জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ঢাকার দুই মেয়রকে নিয়ে একটা সভা হয়। সেই সভায় আগামী বছর কিংবা তার পরবর্তী বছরে চিকুনগুনিয়া যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে তার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এখন চলমান সমস্যার মধ্যে আছি। পরিকল্পনা পরবর্তী বছরের জন্য পরবর্তীতে নেওয়া হবে।
চিকুনগুনিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহল নানা ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোগ নির্মুলের জন্য পরিকল্পিত পরিকল্পনার উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের পরিচালক (আইইডিসিআর) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমরা চলমান সমস্যা মোকাবেলা করছি। তবে সামাজিক সচেতনতার কোন বিকল্প নেই এই রোগ মোকাবেলার জন্য।
তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে চিকুনগুনিয়া রোগ যেন ছড়াতে না পারে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ আনা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা সকল পর্যায় থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি সচেতনতা বড় ভূমিকা পালন করবে। তাই সিটি করপোরেশন কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলাদা ভাবে কিছু করলে হবে না। সামাজিকভাবে সচেতন হয়ে এটা মোকাবেলা করতে হবে। আমরা সেই দিকেই বেশি নজর দিবো।
তবে চিকুনগুনিয়াকে মহামারি হিসেবে সরকারিভাবে না দেখার প্রধান কারণ এই রোগ ঢাকা শহরের বাইরে প্রকট আকার ধারণ করে নাই। রাজধানীর বাইরে যে কজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা সবাই ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন এমন কথা বলেন রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের পরিচালক।
তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়াকে মহামারী বললাম কি বললাম না এটা বড় কথা নয়। এটা মোকেবেলা করাটাই মূল। মহামারি বললে কি রোগীর চিকিৎসার পরিবর্তন হবে নাকি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে? কিন্তুই হবে না।
এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, চিকুনগুনিয়াকে মহামারী বলার যে সকল দিক দরকার এটা সেই অবস্থানে নেই। সংখ্যার দিক দিয়ে মহামারী বলা যায়। কারণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেই মহামারী বলা হয়। এই রোগ এখনো ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাই আমরা মহামারী বলতে পারি না। রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তা নিয়ে ত্বর্ক করার কিছু নেই। কিন্তু ঢাকা ব্যতীত অন্য কোথাও ছড়িয়ে গেলে আমরা মহামারী বলতাম।
 এফবি/একে

Post a Comment

Nice Site

 
Top