0


 নানান স্বাদের চা রেসিপি তৈরি

নানান স্বাদের চা রেসিপি
হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া প্রায় সবাই আমরা প্রতিদিনই চা পান করি। আর চা তো কমবেশি সবাই-ই তৈরী করতে পারি। কিন্তু আপনার তৈরী করা “চা” পান করে অতিথির জিভে তার স্বাদ লেগে থাকে কি? এমন কি হয়, আপনার তৈরী করা চা এর স্বাদ নিতে পরিচিতরা অপেক্ষায় থাকে আপনার বাড়িতে ঢুঁ মারার জন্য? নাকি আপনার তৈরী করা “চা” আপানার নিজের কাছেই পছন্দ হয় না? নাকি মনে মনে খুঁজছেন স্পেশাল চা বানানোর এমন কোন রেসিপি যদি পেতেন!



দৈনন্দিন জীবনে চা আমাদের সবারই নিত্যসঙ্গী। আগে চা বলতে শুধু সাধারণ চা পাতাকে বোঝাতো। বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের চা পাওয়া যায়। নানা স্বাদের এই চা যেমন আমাদের নানা স্বাদে মাতিয়ে তোলে তেমনি এর আছে অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ।
* ব্ল্যাক টি: সাধারণ চা পাতা থেকে এটি তৈরি করা হয়। নাম কালো চা হলেও এটির রঙ হয় লাল। লাল চা আর কালো চায়ের মধ্যে পার্থক্য এতটুকুই লাল চা স্বাদে কিছুটা ধোঁয়াটে গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
* গ্রিন টি: এটিও বেশ জনপ্রিয়। বাজারে গ্রিন টি অত্যন্ত সহজলভ্য। গ্রিন টি আপনার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি সুন্দর স্বাস্থ্য গঠনেও সাহায্য করে।
* লেবু চা: লেবু চা ওজন কমাতে অসাধারণ কার্যকরী। কালো চা বা লিকার চায়ের তুলনায় পুষ্টিগুণে এটি বেশি উপকারী। এর রেসিপিতে আপনাকে লিকার চা তৈরি করে পরিবেশনের সময় পরিমাণমত লেবুর রস মিলিয়ে দিলেই হবে।
* আদা চা: সাধারণ সর্দি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথায় আদা চায়ের উপকারিতা আমরা প্রায় সবাই জানি। গরম এক কাপ চা জাদুর মত মাথা ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। এর রেসিপিতে আপনাকে পানি গরম করার সময় আদা টুকরা করে দিয়ে কিছুক্ষন জ্বাল দিতে হবে। এরপর চা পাতা ও চিনি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এছাড়া চা বানিয়ে তাতেও আদার কিছুটা রস মিশিয়ে চা পান করা যায়।
* তুলসি চা: অসাধারণ উপকারী এই তুলসি চা সর্দিজনিত মাথা ব্যাথা, কাশি, সর্দি জ্বর ও ঠান্ডা লাগা দূর করে।এটি দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা পেতেও সাহায্য করে। ২ থেকে ৩ কাপ পানিতে ৫/৬ টি তুলসি পাতা ফুটতে দিন। পানি ফুটে ১ কাপ পরিমাণ হয়ে এলে তা নামিয়ে গরম গরম পান করুন যন্ত্রণার উপশম হবে। এটি অ্যাসিডিটি  নিরাময়ে অনেক জনপ্রিয়। তুলসি চা প্যাকেটে বাজারে কিনতেও পাওয়া যায়।
* পুদিনা চা: পুদিনা চা পেটের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে। পুদিনা চা বানাতে তাজা অথবা শুকনো দু’রকম পাতাই ব্যবহার করা যায়। ২ কাপ পানি, দেড় কাপ তাজা পাতা অথবা ১ চা চামচ শুকনো পাতা, স্বাদের জন্য চিনি, মধু ও লেবু দেয়া যেতে পারে। পানি ফুটিয়ে পান করার ২-৩ মিনিট আগে গরম পানিতে পাতা দিয়ে রেখে দিতে হবে নির্যাস বের হবার জন্য।
অতিথি আপ্যায়নে স্পেশাল চা তৈরী করুন
এক কাপ টেষ্টি চা খাওয়ার জন্য আমরা ভালো ভালো রেষ্টুরেন্টে যাই। আবার অন্যদিকে অতিথি আপ্যায়নে চা পরিবেশনের কোনো তুলোনা হয় না। কিন্তু সবাই কি আর মজাদার চা বানাতে পারে? স্পেশাল চা তৈরী করার কিছু টিপস আজ আমি আপনাদেরকে দিব। আসুন জেনে নিই টিপস গুলোঃ
প্রথমে আপনি ঠিক করুন কত কাপ চা বানাবেন। এখানে আমি এক কাপ চা এর ব্যাপারে লিখছি। বাকিটা আপনাদের প্রয়োজন মতো তৈরী করবেন।
১) এক কাপ চায়ের জন্য দুই কাপ পানি একটি পাত্রে নিয়ে চুলায় দিন।
২) প্রথমে শুধু পানি দু থেকে তিন মিনিট ফুটিয়ে নিন।
৩) এর পর তাতে দুই টেবিল-চামচ চা’পাতা দিন। (এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন গুড়া চা’পাতার চাইতে দানাদার চা’পাতায় চা এর স্বাদ ভাল হয়)
৪) অল্প আঁচে দুই থেকে তিন মিনিট ফুটতে দিন।
৫) একটি মাঝারি আকৃতির কাপের মধ্যে দুই চা-চামচ চিনি, তিন চা-চামচ গুড়া দুধ ভালো করে মিশিয়ে নিন।
৬) এবার ছাকনি দিয়ে ছেকে চায়ের পানি পাত্র থেকে কাপে ঢালুন।
৭) একটু ভালো করে চামচ দিয়ে এখন নেড়ে দুধ এবং চিনি মিশিয়ে নিন।

দেখুনতো খেয়ে, কেমন তৈরী হয়ে গেলো আপনার হাতের স্পেশাল চা! ঘরে এবং অতিথি আপ্যায়নে চা তৈরীর প্রশংসা শুনতে আপনার নিশ্চই বেশ ভালো লাগবে। রেসিপি সম্পর্কে যে কোন প্রশ্ন থাকলে টিউমেন্ট করতে পারেন। সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্।



চা বানানোর নিয়ম-কানুন
একেবারে নিখুঁত এক কাপ চা বানানো নিয়ে নিজের রেসিপিতে চোখ বুলোলে কমসে কম ১১টা অসাধারণ দিক খুঁজে পাই আমি। এর মধ্যে দুটো নিয়ে মোটামুটি ঐকমত্যের সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে, তবে অন্তত চারটা নিয়ম আছে যেগুলো নিয়ে বিতর্ক চরমে। এই হচ্ছে আমার একান্তই নিজের ১১টা নিয়ম – সবগুলোই আমার চোখে সেরা:

প্রথম কথা হচ্ছে, আপনাকে অবশ্যই ভারতীয় অথবা শ্রীলঙ্কার চা ব্যবহার করতে হবে। স্বীকার করি, চীনা চায়ের এমন কিছু গুণ আছে যেগুলো এযুগে অপছন্দ করার জো নেই – খরচ বাঁচায় তো বটেই, সাথে আবার দুধ ছাড়াও খেতে পারা যায় চাইলে – কিন্তু তেমন উদ্দীপনা জাগে না আসলে খেয়ে। আপনার নিজেকে আগের চাইতে জ্ঞানী, সাহসী কিংবা আশাবাদীও মনে হবে না এটা খাওয়ার পর। ‘চমৎকার এক কাপ চা’ স্বস্তি-জাগানিয়া এই কথাটা কেউ যদি কখনো উচ্চারণ করে, আপনি নিশ্চিন্তে ধরে নিতে পারেন যে সে ভারতীয় চায়ের কথা বলছে।
দ্বিতীয়ত, চা সবসময়েই অল্প করে বানাতে হয় – পটে আর কি! হাঁড়িতে চা বানালে মোটেও স্বাদ পাবেন না আপনি; আর ইয়া বড় ডেকচিতে যে চা বানায় মিলিটারিরা, ওটা খেতে গেলে চুনকাম আর তেলচর্বির মত লাগে। পট হতে হবে মাটি কিংবা চীনামাটির তৈরি। রূপো কিংবা ব্রিটানিয়ার পটে চা একেবারে বিশ্রী হয় খেতে, এনামেলের পট তো আরো বাজে। তবে কেন যেন দস্তার পটে চা বেশ ভাল হয়, ইদানিং তেমন পাওয়াই যায় না যদিও!
তিন নম্বর কথা, পটটাকে আগে থেকেই তাতিয়ে নেবেন আগুনে। এমনিতে যেমন গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া হয়, সেটা না করে উনুনের ওপর রাখলেই ভাল কাজে দেয়।
চতুর্থত, চা-টা কড়া হতে হবে। সোয়া গ্যালনের পট কানায় কানায় ভরতে চাইলে উঁচু উঁচু করে ছয় চা-চামচ চাপাতা দেবেন। টানাটানির এই সময়ে অবশ্য সপ্তাহের প্রতিদিনই এই নিয়মে চলতে পারবেন না আপনি; তবে আমার বিশ্বাস, বিশ কাপ পানসে চায়ের চেয়ে এক কাপ কড়া চা অনেক ভাল। যে কোন সত্যিকারের চাপ্রেমীই যে কেবল কড়া চা পছন্দ করেন তাই নয়, বরং একেকটা বছর গড়ানোর সাথে তারা আরো বেশি কড়া চা পছন্দ করেন – বুড়ো পেনশনারদেরকে যে কেন অতিরিক্ত রেশন দেওয়া হয় সে তো বুঝতেই পারছেন এইবার!
পাঁচ নম্বরে বলছি, চা সরাসরি পটে দিয়ে দেবেন। ওটাকে অবশ্যই ছাঁকনি, মসলিনের ব্যাগ কিংবা এরকম কোন জেলে পুরবেন না। চাপাতা নাকি ক্ষতিকর – এমনটা ভেবে কোন কোন দেশে পটের নলের ভেতরে ছোট্ট ছাঁকনি ঝুলিয়ে দেয় সেগুলো আটকানোর জন্য। আসল কথা হচ্ছে, আপনি কোনরকম সমস্যা ছাড়াই ইচ্ছেমত চাপাতা গিলে ফেলতে পারেন, আর পটে চা ছেড়ে না দিলে এটা কক্ষণোই ঠিকমত মিশবে না।
ষষ্ঠত, পটটাকে কেতলির কাছে নিয়ে যেতে হবে, উল্টোটা করা যাবে না কোনভাবেই। আঘাত হানার সময় পানিটাকে ফুটতে হবে, যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে পানি ঢালার সময় একে আগুনের ওপর রাখতে হবে। কেউ কেউ বলে, ফোটানোর জন্য টাটকা পানি ব্যবহার না করলে হয় না, তবে আমি কখনো এর মধ্যে আলাদা কোন বিশেষত্ব দেখি নি।
সাত, চা বানানোর পর একে নাড়বেন, আরো ভাল হয় যদি জোর একটা ঝাঁকুনি দিতে পারেন। তারপর পাতাগুলোকে থিতানোর সময় দিতে হবে।
আট নম্বর নিয়ম হচ্ছে, ভাল একটা ব্রেকফাস্ট কাপ থেকে চা খেতে হবে আপনাকে – মানে বেলনাকৃতির যেগুলো সেগুলো; চ্যাপ্টা আর চিকন কাপগুলো না। ব্রেকফাস্ট কাপে চা ধরে বেশি, আর অন্যটায় ভালমত খেতে শুরু করার আগেই দেখবেন চা অর্ধেক ঠাণ্ডা হয়ে বসে আছে।
নবম কথা: চায়ে দেওয়ার আগে দুধ থেকে ননী তুলে নিতে হয় সবসময়। বেশি ননীওয়ালা দুধে চায়ের স্বাদ একেবারেই ভেস্তে যাবে।
দশ নম্বর, কাপে প্রথমে চা ঢালতে হবে। এই জিনিসটা নিয়েই বিতর্ক সবচেয়ে বেশি; ব্রিটেনের যে কোন পরিবারেই দেখবেন এটা নিয়ে অন্তত দু’ধরনের মতবাদ চালু আছে। দুধ আগে দেওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী যারা, তারা আপনাকে যত শক্তিশালী যুক্তিই দেখাক না কেন; আমি জানি আমার নিজের যুক্তির কোন জবাব নেই। সেটা হচ্ছে, আপনি যদি চা আগে দেন আর তারপর নাড়তে নাড়তে দুধ দিতে থাকেন, তাহলে কতটুকু দুধ দিচ্ছেন সে ব্যাপারে আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকছে পুরোপুরি; কিন্তু উল্টোটা করলে দুধ যে বেশি হয়ে যাবে সেটা নিশ্চিত।
শেষ কথা হল, চায়ে চিনি দেওয়া যাবে না – যদি না আপনি রাশানদের ঢঙে চা খান। জানি, খুব ভালভাবেই জানি যে এই ব্যাপারে আমি সংখ্যালঘু। কিন্তু তাতে কী? চিনি দিয়ে  চায়ের মজা যদি নষ্টই করে ফেললেন তবে কোন্‌ মুখে নিজেকে সত্যিকারের চাপ্রেমী দাবি করেন আপনি? চায়ে মরিচ কিংবা লবণ দিতে চাওয়াটাও একইরকম বোকামি। বিয়ারের যেমন তেতো হওয়ার কথা, চায়েরও ঠিক তাই। চিনি দিচ্ছেন – এর অর্থ আপনি চা নয়, বরং চিনির স্বাদ পরখ করছেন। তার চেয়ে বরং গরম পানিতে চিনি গুলিয়ে খেলেই হয়!
কিছু লোক বলে যে তাদের নাকি চা ভাল লাগে না, কেবল উষ্ণ আর সতেজ থাকার জন্যই নাকি তারা চা খান – তাই চায়ের স্বাদ তাড়াতে চিনি দেন। এই সব বিভ্রান্ত মানুষদেরকে বলে রাখছি: অন্তত দুটো সপ্তাহ চিনি ছাড়া চা খেয়ে দেখুন, আর কোনদিনও চায়ে মিষ্টি দিতে চাইবেন – এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
ওপরের কথাগুলো যে কেবল চা বানানো নিয়ে বিতর্কিত ব্যাপারগুলোই তুলে এনেছে এমন নয়, পুরো কাজটা যে কেমন কৌশলী হয়ে উঠছে দিনকে দিন – সেটাও বোঝা যাচ্ছে এখান থেকে। চায়ের পট নিয়ে এক রহস্যময় সামাজিক রীতি গড়ে উঠেছে (যেমন, পিরিচ থেকে চা খাওয়াটা এত বাজেভাবে দেখা হয় কেন বলতে পারেন?), শুধু তাই নয় – ভবিষ্যদ্বাণী, মেহমানদের আসার খবর আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া, খরগোসকে খাওয়ানো, পোড়া ক্ষতের পরিচর্যা আর কার্পেট ঝাড়ু দিতে চাপাতার ব্যবহার নিয়েও যথেষ্ট লেখা যায় চাইলে। আপনার রেশন থেকে ঐ বিশ কাপ ভাল, কড়া, যত্ন নিয়ে বানানো জিনিসগুলোকে মুচড়ে বের করে আনতে চাইলে পট গরম করে নেওয়া কিংবা ফুটন্ত পানি ব্যবহার করার মত ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে নজর না দিলেই নয়!

Post a Comment

Nice Site

 
Top