0



বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষণ ও তার মা কে শারীরিক নির্যাতনের পর চুল কেটে ন্যাড়া করার ২১ মিনিটের ভিডিও ইউটিউবে ছাড়ার হুমকি দিয়েছিল ‘ধর্ষক’ তুফান সরকারের বড় শ্যালিকা পৌর কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি।
ওইদিন রুমকি তার বাসার গৃহপরিচারিকা দিয়ে মা-মেয়ে কে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেছিলেন। এই ভিডিও ইউটিউবে না ছাড়ার জন্য তুফানের স্ত্রী ও তার বোনের হাত-পা ধরে অনুরোধ করেছিলেন মা-মেয়ে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি কেবিনে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা আরো জানান, মেয়ের লেখাপড়ার জন্যই কিছুদিন আগে বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় তুফান সরকারদের মহল্লায় একটি বাসা ভাড়া নেন।
তিনি জানান, ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে গত ১৭ জুলাই সকালে তুফান তার মেয়েকে ডেকে এনে তুফান ধর্ষণ করে। এতে রক্তপাত হলে তুফান তার সহযোগী আতিককে দিয়ে ওষুধ এনে খাইয়ে দেয়।
ওই ছাত্রীর মা জানান, গত ২৮ জুলাই দুপুরে কাউন্সিলর রুমকি নিজ বাড়িতে তাদেরকে ধরে আনে। সেখানে রুমকি তার মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয় এবং তুফানের সঙ্গীদের যা ইচ্ছা তাই করতে বলে।
তিনি জানান, তারা সবাই মিলে মা-মেয়েকে রডের পাইপ দিয়ে ৪ ঘণ্টা নির্যাতন করে। এর পর রুমকি, আশা ও রুমা কাঁচি দিয়ে তাদের চুল কেটে দেয়। পরে নাপিত ডেকে এনে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। তাদের আর্তনাদ মোবাইল ফোনে আত্মীয়-স্বজনদের শোনায় রুমকি ও তার সহযোগীরা। সবাই উল্লাস করে। এ সময় আশপাশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখলেও কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
তিনি জানান, কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি তার বাসার কাজের ১৩ বছর বয়সী মেয়ের মাধ্যমে পুরো নির্যাতনের ছবি ভিডিও করান। এ ছবি ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘রুমকি ও অন্যরা বলেছে, আমরা সরকারি দলের সাথে জড়িত, আমাদের অনেক লোকজন আছে। পুলিশ প্রশাসন আমাদের হাতের মুঠোয়। তাই আমাদের মেরে ফেললেও কিছু হবে না। নির্যাতনের পর আমাদের ভাড়া বাড়িতে পাঠিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মালামাল পরিবহনের জন্য পিকআপ ভ্যানও পাঠানো হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘তুফানের বড় ভাই জাহাঙ্গীর একদিন সময় দেন এবং অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নিতে বলেন। রাতে এক প্রতিবেশী আমাদের দয়া করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক(অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ জানান, ধর্ষণের পর এমন নির্যাতনের কাহিনীও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ভুক্তভোগী ছাত্রী।
তিনি জানান, সেইদিন মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার নাপিত জীবন রবিদাস।
আবুল কালাম আজাদ জানান, এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুমকি এবং তুফানের বাসার কাজে মেয়েকে আনা হয়েছিল। তারাও মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে নির্যাতনের কথা বলেছে। পরে কাজের মেয়েদের নিজ নিজ অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ ঘটনা প্রকাশের পর মূল নায়ক শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারসহ ৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করে ৩ জনকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এর পরের দিন কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকির ৪ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
এছাড়া তুফানের স্ত্রী আশা, তুফানের শাশুড়ি রুমি, তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান, জিতু, মুন্না ও নাপিত জীবন রবিদাসকে দুইদিনের রিমান্ড নেওয়া হয়েছে।
এরপর তুফান সরকারকে শহর শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার তুফানের বড় ভাই আব্দুল মতিন সরকারকেও শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার দ্বিতীয় দফায় তুফান ও তার সহযোগী মুন্নাকে ২ দিনের এবং তুফানের স্ত্রী আশা বেগম, শাশুড়ি রুমা বেগমকে ১ দিনের রিমান্ড নিয়েছে পুলিশ।

Post a Comment

Nice Site

 
Top