ধরুন, হঠাৎ করেই আপনার শখের এবং প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোনটি পানিতে পড়ে গেল। সাধারণ ভাবেই রাজ্যের চিন্তা আর সেই সাথে বিরক্তি ভর করবে আপনার উপর। কিন্তু এরপরেই নিশ্চয়ই যে চিন্তাটুকু আপনার মাথায় আসবে তা হচ্ছে ‘মেকার এর কাছে নেয়া’। তবে কিছু কাজের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই নিজেই পানিতে পড়ে যাওয়া মোবাইল কিছুটা হলেও ভালো কন্ডিশনে নিয়ে আসা যায়, অন্তত মারাত্নক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যায়। চলুন, এরকম কিছু টিপস আপনাদের সাথে আজ শেয়ার করি। মনে রাখবেন, পদ্ধতি গুলো সবই বেসিক পর্যায়ের এবং আমরা যেহেতু সবাই মোবাইল সার্ভিসিং-এর কাজ জানিনা তাই অন্তত এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রিয় ডিভাইসটিকে সর্বোচ্চ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো।
১। যত দ্রুত সম্ভব আপনার ফোনটি পানি থেকে তোলার ব্যবস্থা নিন। কেননা বিভিন্ন রকম পোর্ট যেমন, হ্যান্ডস ফ্রি কিট, মাইক্রোফোনের ছোট্ট ছিদ্র, চার্জিং বা ইউএসবি ক্যাবলের পোর্ট – ইত্যাদির মাধ্যমে খুব কম সময়েই অনেক পানি আপনার মোবাইল ফোনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আপনার মোবাইল ফোনটি পানি থেকে তুলুন এবং বন্ধ করে দিন (সুইচ অফ করুন) এবং ব্যাটারী খুলে ফেলুন। কেননা, পানি থেকে তোলার পর যদি আপনার মোবাইল ফোনটি চালু অবস্থায় থাকে তবে পানির কারনে এতে শর্ট-সার্কিট হতে পারে।
২। পানি থেকে তুলে আনার পর যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল ফোনটিকে একটি শুষ্ক তোয়ালে বা গামছা দিয়ে মুছে ফেলুন এবং মোবাইলের সাথে যদি অনান্য কোন অ্যাকসেসরিস যেমন রিং, ইয়ার বাড বা কভার – ইত্যাদি থেকে থাকে তা খুলে ফেলুন।
৩। মোবাইল থেকে আপনার সিম কার্ড এবং মেমরী কার্ডটি খুলে ফেলুন। যদিও, এগুলো পানিতে তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয় না তবুও ভেজা অবস্থাতে মোবাইলের মাঝে সিম কার্ড বা মেমরী কার্ড রাখার প্রয়োজন নেই।
৪। আপনি যদি পারেন তবে মোবাইলের বডি খুলে ভেতরের সার্কিটটি শুখনো কিছু দিয়ে হালকা ভাবে মুছে ফেলতে পারেন। মোছার পর ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সাহায্যে সার্কিটটিকে করতে পারেন আরও শুষ্ক। তবে মনে রাখবেন, সার্কিট শুষ্ক করার জন্য কখনোই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না, কেননা এর গরম হাওয়া সার্কিটের কোন একটি কম্পোনেন্টকে গলিয়ে আপনার মোবাইলকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। তাই, হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা শুষ্ক গামছা ব্যবহার করুন। এরপর, সাবধানতার সাথে পুনরায় যন্ত্রাংশগুলো যুক্ত করুন।
৫। এরপরেও আপনার মোবাইলের ভেতরে আদ্রতা থাকতেই পারে। তাই, একটি বড় বাটি বা ডিশের মাঝে ভাতের চাল রেখে এর মাঝে মোবাইলটিকে রেখে দিন। ভাতের চাল আস্তে আস্তে মোবাইলের ভেতরের আদ্রতা শুষে নেয়। ভাতের চালের পরিবর্তে আপনি সিলিকা জেলও ব্যবহার করতে পারেন।
৬। সব শেষে আপনার মোবাইলটি আবারো কিছুক্ষনের জন্য শুখনো তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ শুষ্কতা নিশ্চিত করুন। আশা করি উপরের ধাপ গুলো অনুসরণ করলে আপনার মোবাইলটি ঠিক মত কাজ করবে, আর যদি তবুও কাজ না করে তবে অবশ্যই মোবাইল সার্ভিসিং-এ নিয়ে যেতে হবে কেননা এরপর আপনার মোবাইলের একজন দক্ষ মোবাইল ইলেক্ট্রিশিয়ানের দরকার। যাই হোক, আশা করি আজকের টিউটোরিয়ালটি আপনাদের কাজে আসবে। আজ এ পর্যন্তই থাক, ভালো থাকুন। থাকুন প্রিয় টেকের সাথেই।
নোটঃ ● আপনি যদি একেবারেই অভিজ্ঞ না হন তবে মোবাইলের সার্কিট খুলবেন না।
● ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহারে সতর্ক থাকবেন, মডারেট সাকশন ব্যবহার করবেন।
● আপনি বলতে পারেন, মোবাইলের বডি খুললে ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যায়। প্রথমত, আমাদের দেশে এখনো মোবাইলের জন্য ইন্সুরেন্স পদ্ধতি আমরা কেউ ব্যবহার করিনা, তাই পানিতে পরা মোবাইলের ক্ষেত্রে আমরা কোন ক্ষতিপূরণ পাবোনা। দ্বিতীয়ত, খেয়াল করে মোবাইলের ওয়ারেন্টি কার্ড দেখলে দেখবেন লেখা আছে ‘পানিতে পরার ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যায়’, তাই আমি মোবাইল খুলে সার্কিট বোড শুখিয়ে নেয়ার কথা বলেছি। কেননা, এমনিতেও সাধারণ নিয়মে আপনার মোবাইলটি পানিতে পরে গেলে আপনি মোবাইলের ওয়ারেন্টি হারাবেন।
Post a Comment
Nice Site